দ্যা ভেজিটেরিয়্যান
যেহেতু কবিতার প্রতি তাঁর টান ছিল ছোটবেলা থেকেই, বলা হয়ে থাকে, কলেজ জীবনে ই-স্যাংয়ের কবিতার একটি পঙক্তি হানের মনস জগতে নাড়া দিয়ে যায়। পঙক্তিটি হলো : ‘আমি বিশ্বাস করি, মানুষের উচিত বৃক্ষে রূপান্তরিত হওয়া।’ ঔপনিবেশিক আমলে যে ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো উৎসাহ তিনি এখান থেকেই পান এবং এখানকার উৎসাহের বলেই তিনি তাঁর সবচেয়ে সফল সৃষ্টিকর্ম ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ লিখতে পারেন।
মূলত তিনটি উপন্যাসিকার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাসটি । ইংরেজি অনুবাদের আগে কোরিয়ায় তিনটি উপন্যাসিকারূপেই প্রকাশ করা হয়েছিল। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের নাম ইয়ং-হে। উপন্যাসটির তিনটি অংশের সমন্বিত রূপের সবটুকুরই কেন্দ্রে আছে ইয়ং-হে। তবে তিনজন আলাদা চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণনা করা হয়েছে কাহিনী। ইয়ং-হের স্বামী মি. চিয়ং, ইয়ং-হের বোন ইন হে এবং বোনের স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করা হয়েছে তিনটি অংশে। প্রথম অংশের বয়ানকারী মি. চিয়ংয়ের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় সংবেদনশীলতার অভাব; সে কর্পোরেট জগতের একজন অতি সাধারণ প্রতিনিধি। ইয়ং-হে কোনো দিক থেকেই লক্ষণীয় স্বভাবে ছিল না বলেই তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে সে। জোর গলায় কিছু বলবে না এমন একজন স্ত্রীই তার দরকার ছিল। ইয়ং-হে সম্পর্কে তার নিজের ভাষ্য হলো:
তার অভ্যাস ছিল খুব কম কথা বলা। আমার কাছে তার কখনও তেমন কিছু চাওয়ার ছিল না বললেই চলে। আমি যত দেরি করেই বাড়ি ফিরি না কেন, সে নিজে থেকে কখনও কিছু বলত না। কোনো রকম ঝগড়া-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করত না। এমনকি আমাদের দুজনের ছুটির দিন একই হয়ে গেলেও সে কখনও আমাদের দুজনের এক সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথাও তোলেনি। বিকেলবেলাটা আমি টিভির রিমোট হাতে আলস্যে পার করে দিতাম। সে তার নিজের রুমেই একাকী কাটিয়ে দিত। শুধু খাবার সময়ই নিজের রুমের দরজা খুলে বের হতো; খাবার তৈরি করার জন্য নীরবে বের হতো রুম থেকে। এরকম স্ত্রী থাকার কারণে আর তার জীবন যাপন প্রণালী এমন হওয়ার কারণে আমার দিনগুলো কেটে যেত কোনো রকম উত্তেজনা ছাড়াই।
এভাবেই চলতে থাকে তাদের জীবন। তবে হঠাৎ একটা স্বপ্ন দেখার পর ইয়ং-হে সিদ্ধান্ত নেয়, সে আর মাংস খাবে না। স্বামী এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের চাপাচাপির পরও তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে সে। তার বাবা একদিন জোর করে মুখে মাংস গুঁজে দিতে চেষ্টা করে। এরপর সে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে।
ইয়ং-হের বোনের স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গিতে উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশ বয়ান করা হয়েছে । সে পেশায় একজন ভিডিও আর্টিস্ট। প্রথমত ইয়ং-হের দিকে তার তেমন নজর ছিল না। কথা প্রসঙ্গে তার স্ত্রী একদিন উল্লেখ করে, ইয়ং-হের নিতম্বে একটা জন্ম দাগ আছে। তারপর থেকে ইয়ং-হের ওই জন্ম দাগটা তার আর্টের ভেতরে নিয়ে আসার চেষ্টায় সে বুঁদ হয়ে থাকে।
আর তৃতীয় অংশ তৈরি হয়েছে উপন্যাসের কাহিনীর শুরুর তিন বছর পরের ঘটনা নিয়ে। ইয়ং-হে তখন মানসিক হাসপাতালে ভর্তি। তাকে দেখাশোনার জন্য আছে শুধু তার বোন। বাকি সবাই তাকে ত্যাগ করেছে। এক পর্যায়ে সে সব ধরণের খাবার বর্জন করে। তার এই আত্ম-উপোস নিয়ে তার বোন বিশেষ চিন্তিত হয়ে পড়ে। তার বোন ইন-হে এমন সংকটকালে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে যায়। সেও ঘন ঘন স্বপ্ন দেখে। এক রাতে সেও বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তার ঘুমন্ত স্বামী সন্তান ফেলে।
স্বপ্নের অভিজ্ঞতা লাভ করে ইয়ং-হে, তার বোন, তার বোনের স্বামী। স্বপ্নে নিজেদের বিকৃত চেহারা দেখতে পায় তারা। তাদের মুখ হয় বদলে যায়, নয়তো অস্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। এটাই তাদের আদি সত্তা। এই আদি সত্তার কাছে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দিতে পারে শুধু ইয়ং-হে। ইন-হে এবং তার স্বামী এই সত্তার কাছে নিজেদের সার্বক্ষণিক কিংবা পুরোপুরি সমর্পণ করতে পারে না; নিজেদের শুধু আংশিক সমর্পণ করতে পারে তারা দুজন।
খুব স্পষ্ট আর আবেগঘন চিত্রকল্প তৈরি হয়েছে এ উপন্যাসটিতে। নিজের খুব কাছের মানুষদের সম্পর্কে জানার বিষয়ে ব্যর্থতাই এখানে প্রধান হয়ে ওঠে। এমনকি নিজের ভেতরও অনেক সময় অচেনা কোনো অনুভূতি উপস্থিত হতে পারে। এমনই এক অপার্থিব মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায় ইয়ং-হের বোনের স্বামী যখন সে ইয়ং-হের পিঠ থেকে শুরু করে নিতম্ব পর্যন্ত ফুলের ছবি আঁকে। তার ঘাড়ের ওপর থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে নিচের দিকে আঁকতে আঁকতে এগিয়ে যায়। এই মুহূর্তে তার মধ্যে যে শিহরণ জাগে সেটাকে শুধুই যৌন অনুভূতি বললে খাটো করা হয়। তার সমস্ত সত্তার ভেতর দিয়ে অবিরাম বহমান এক বৈদ্যুতিক ঝাঁকুনি বলা যায় এটাকে। এই উপটন্যাসটি এরকম আরো অনেক রং রূপ আর রহস্যময় আবেগের প্রবাহে ভরা ।
যেহেতু কবিতার প্রতি তাঁর টান ছিল ছোটবেলা থেকেই, বলা হয়ে থাকে, কলেজ জীবনে ই-স্যাংয়ের কবিতার একটি পঙক্তি হানের মনস জগতে নাড়া দিয়ে যায়। পঙক্তিটি হলো : ‘আমি বিশ্বাস করি, মানুষের উচিত বৃক্ষে রূপান্তরিত হওয়া।’ ঔপনিবেশিক আমলে যে ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো উৎসাহ তিনি এখান থেকেই পান এবং এখানকার উৎসাহের বলেই তিনি তাঁর সবচেয়ে সফল সৃষ্টিকর্ম ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ লিখতে পারেন। মূলত তিনটি উপন্যাসিকার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাসটি । ইংরেজি অনুবাদের আগে কোরিয়ায় তিনটি উপন্যাসিকারূপেই প্রকাশ করা হয়েছিল। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের নাম ইয়ং-হে। উপন্যাসটির তিনটি অংশের সমন্বিত রূপের সবটুকুরই কেন্দ্রে আছে ইয়ং-হে। তবে তিনজন আলাদা চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণনা করা হয়েছে কাহিনী। ইয়ং-হের স্বামী মি. চিয়ং, ইয়ং-হের বোন ইন হে এবং বোনের স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করা হয়েছে তিনটি অংশে। প্রথম অংশের বয়ানকারী মি. চিয়ংয়ের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় সংবেদনশীলতার অভাব; সে কর্পোরেট জগতের একজন অতি সাধারণ প্রতিনিধি। ইয়ং-হে কোনো দিক থেকেই লক্ষণীয় স্বভাবে ছিল না বলেই তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে সে। জোর গলায় কিছু বলবে না এমন একজন স্ত্রীই তার দরকার ছিল। ইয়ং-হে সম্পর্কে তার নিজের ভাষ্য হলো: তার অভ্যাস ছিল খুব কম কথা বলা। আমার কাছে তার কখনও তেমন কিছু চাওয়ার ছিল না বললেই চলে। আমি যত দেরি করেই বাড়ি ফিরি না কেন, সে নিজে থেকে কখনও কিছু বলত না। কোনো রকম ঝগড়া-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করত না। এমনকি আমাদের দুজনের ছুটির দিন একই হয়ে গেলেও সে কখনও আমাদের দুজনের এক সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথাও তোলেনি। বিকেলবেলাটা আমি টিভির রিমোট হাতে আলস্যে পার করে দিতাম। সে তার নিজের রুমেই একাকী কাটিয়ে দিত। শুধু খাবার সময়ই নিজের রুমের দরজা খুলে বের হতো; খাবার তৈরি করার জন্য নীরবে বের হতো রুম থেকে। এরকম স্ত্রী থাকার কারণে আর তার জীবন যাপন প্রণালী এমন হওয়ার কারণে আমার দিনগুলো কেটে যেত কোনো রকম উত্তেজনা ছাড়াই। এভাবেই চলতে থাকে তাদের জীবন। তবে হঠাৎ একটা স্বপ্ন দেখার পর ইয়ং-হে সিদ্ধান্ত নেয়, সে আর মাংস খাবে না। স্বামী এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের চাপাচাপির পরও তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে সে। তার বাবা একদিন জোর করে মুখে মাংস গুঁজে দিতে চেষ্টা করে। এরপর সে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে। ইয়ং-হের বোনের স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গিতে উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশ বয়ান করা হয়েছে । সে পেশায় একজন ভিডিও আর্টিস্ট। প্রথমত ইয়ং-হের দিকে তার তেমন নজর ছিল না। কথা প্রসঙ্গে তার স্ত্রী একদিন উল্লেখ করে, ইয়ং-হের নিতম্বে একটা জন্ম দাগ আছে। তারপর থেকে ইয়ং-হের ওই জন্ম দাগটা তার আর্টের ভেতরে নিয়ে আসার চেষ্টায় সে বুঁদ হয়ে থাকে। আর তৃতীয় অংশ তৈরি হয়েছে উপন্যাসের কাহিনীর শুরুর তিন বছর পরের ঘটনা নিয়ে। ইয়ং-হে তখন মানসিক হাসপাতালে ভর্তি। তাকে দেখাশোনার জন্য আছে শুধু তার বোন। বাকি সবাই তাকে ত্যাগ করেছে। এক পর্যায়ে সে সব ধরণের খাবার বর্জন করে। তার এই আত্ম-উপোস নিয়ে তার বোন বিশেষ চিন্তিত হয়ে পড়ে। তার বোন ইন-হে এমন সংকটকালে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে যায়। সেও ঘন ঘন স্বপ্ন দেখে। এক রাতে সেও বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তার ঘুমন্ত স্বামী সন্তান ফেলে। স্বপ্নের অভিজ্ঞতা লাভ করে ইয়ং-হে, তার বোন, তার বোনের স্বামী। স্বপ্নে নিজেদের বিকৃত চেহারা দেখতে পায় তারা। তাদের মুখ হয় বদলে যায়, নয়তো অস্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। এটাই তাদের আদি সত্তা। এই আদি সত্তার কাছে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দিতে পারে শুধু ইয়ং-হে। ইন-হে এবং তার স্বামী এই সত্তার কাছে নিজেদের সার্বক্ষণিক কিংবা পুরোপুরি সমর্পণ করতে পারে না; নিজেদের শুধু আংশিক সমর্পণ করতে পারে তারা দুজন। খুব স্পষ্ট আর আবেগঘন চিত্রকল্প তৈরি হয়েছে এ উপন্যাসটিতে। নিজের খুব কাছের মানুষদের সম্পর্কে জানার বিষয়ে ব্যর্থতাই এখানে প্রধান হয়ে ওঠে। এমনকি নিজের ভেতরও অনেক সময় অচেনা কোনো অনুভূতি উপস্থিত হতে পারে। এমনই এক অপার্থিব মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায় ইয়ং-হের বোনের স্বামী যখন সে ইয়ং-হের পিঠ থেকে শুরু করে নিতম্ব পর্যন্ত ফুলের ছবি আঁকে। তার ঘাড়ের ওপর থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে নিচের দিকে আঁকতে আঁকতে এগিয়ে যায়। এই মুহূর্তে তার মধ্যে যে শিহরণ জাগে সেটাকে শুধুই যৌন অনুভূতি বললে খাটো করা হয়। তার সমস্ত সত্তার ভেতর দিয়ে অবিরাম বহমান এক বৈদ্যুতিক ঝাঁকুনি বলা যায় এটাকে। এই উপটন্যাসটি এরকম আরো অনেক রং রূপ আর রহস্যময় আবেগের প্রবাহে ভরা ।
Writer |
|
Translator |
|
Publisher |
|
ISBN |
9789849440277 |
Language |
Bengali / বাংলা |
Country |
Bangladesh |
Format |
Hardcover |
First Published |
1st Published, 2020 |
Pages |
172 |