আমাদের কথা
বাংলাদেশে বইয়ের সাম্রাজ্য ‘ বাতিঘর ’
বাংলাদেশের তিনটি প্রধান জেলা ঢাকা , চট্টগ্রাম ও সিলেটে পড়ুয়াদের জন্য বইয়ের স্বর্গসম বুকশপ বাতিঘর। যাত্রারম্ভ ২০০৫ সালে , চট্টগ্রামের চেরাগি মোড়ের ১০০ বর্গফুটের একটি ছোট্ট দোকানে। শিল্পী - সাহিত্যিকদের আড্ডার প্রিয় স্থানটিতে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল গ্রন্থবিপণিটি। সাত বছরের মাথায় নতুন ঠিকানা হয় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নিচতলায়। জাহাজের আদলে দু ’ হাজার বর্গফুটের সুবিশাল বইবিপণিটির নকশা করেন শিল্পী শাহীনূর রহমান। গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই পাঠককে আমন্ত্রণ জানায় মোলায়েম , হলদে আলো। কাঠের পাটাতন দেওয়া মেঝে , জাহাজের মতো বৃত্তাকার জানালা আর জাহাজের মতো ঝুলন্ত দড়ি দেখে পাঠকের মনে হতে পারে তিনি আচম্বিতে পৌঁছে গেছেন প্রাচীন কোনো জাহাজে , যে জাহাজটিকে কানায় কানায় পূর্ণ করে রেখেছে বিচিত্র রকমের ; কাছে - পিঠের , দূর - দেশের লেখকদের সাহিত্যকর্ম।
বাতিঘরের দ্বিতীয় শাখার উদ্বোধন হয় ঢাকায় , ২০১৭ সালে।
এবারে শাহীনূর রহমানের নকশায় বাংলা মোটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাত তলায় তৈরি হয় মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস ও স্থাপত্যশিল্পের একটি মনোমুগ্ধকর প্রতিচ্ছবি। স্টেজটি তৈরি হয় পরিবিবির মাজারের আদলে ; কাউন্টারটি দেখতে হয় ঠিক দেওয়ান - ই - আমের মতো ; কাউন্টারের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে লালবাগ কেল্লার দক্ষিণ প্রবেশপথ ; হাতির পিঠে রাজা - রাজড়ার ব্যবহৃত ছত্রির মতো করে বানানো হয় বই রাখার স্থান। পুরো গ্রন্থবিপনির দেয়ালে আঁকা হয় তাজমহলের গায়ে শোভা পাওয়া মোটিফের মতো সূক্ষ্ম , রঙিন নকশা। বইপড়ুয়া , কবি - সাহিত্যিক , শিল্পীদের আসা - যাওয়ায় নিত্য মুখরিত হয় বাতিঘর ঢাকা।
বাতিঘর সিলেটের নকশাও যথারীতি শিল্পী শাহীনূর রহমানের করা। চা - বাগানে ঘেরা সতেজ - সবুজ সিলেটের ইতিহাস - ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হয় বাতিঘর সিলেট। সুরমা নদীর লৌহসেতু ক্বীন ব্রীজ , আলী আমজদের ঘড়ির রেপ্লিকা ,
- পাতা সংগ্রহের ঝুড়ি মিলিয়ে অভিনব , মনোমুগ্ধকর নকশায় সজ্জিত বাতিঘর সিলেটের যাত্রা শুরু ২০১৯ সালে।
বিপণি ছাড়াও বাতিঘর ঢাকা , চট্টগ্রাম ও সিলেটের ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে বই কেনেন পড়ুয়ারা।
আর ধীরে ধীরে বাড়ছে বাংলা ভাষাভাষী বিদেশি ক্রেতার সংখ্যাও। প্রকাশক হিসেবেও এরই মধ্যে বেশ পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাতিঘর। সমসাময়িক কবি - সাহিত্যিকদের বই , ভিন্ন ভাষা থেকে অনূদিত বইয়ের পাশাপাশি ধ্রুপদী ও দুষ্প্রাপ্য সাহিত্যের মানসম্মত সংস্করণ প্রকাশ করছে বাতিঘর। ওয়েবসাইট baatighar.com বাতিঘরের সম্প্রতি সংযোজন।
বাতিঘরের সবগুলো শাখাতেই আছে বাংলা - ইংরেজি দু ’ ভাষার বইয়ের বিপুল সংগ্রহ। কথাসাহিত্য , গল্প - প্রবন্ধ - কবিতা , শিল্প - দর্শন - ইতিহাস - রাজনীতি , মনোবিজ্ঞান , নাট্যতত্ত্ব , স্থাপত্যশিল্পসহ বিবিধ বিষয়ের বইয়ের সম্ভার আছে ছেলেবুড়ো সবার জন্য। সব রুচির পাঠকের জন্যই আছে কোনো না কোনো বই। প্রতিটি শাখায় ছোটদের জন্য রয়েছে আলাদা শিশুকিশোর কর্নার। গল্প , রহস্য , বিজ্ঞান , ছবির বই , ভূতের বই , গোয়েন্দা বই , কমিকস নিয়ে ক্ষুদে পাঠকদের উচ্ছ্বাস ভবিষ্যতের পাঠকপ্রজন্ম নিয়ে আশার সঞ্চার করে। প্রতিষ্ঠাতা দীপঙ্কর দাশের ইচ্ছে দেশের সব বিভাগে এবং পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ে গ্রন্থবিপণিটির শাখা চালু করার। নিশ্চয়ই পাঠক , লেখক , শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুপ্রেরণায় পুরো বিশ্বে পৌঁছে যাবে ‘ বাতিঘর ’ নামের বইয়ের সাম্রাজ্যটির দীপ্তি।